সকাল ১০টায় বাসা থেকে বের হন উজ্জ্বল বোস (২৯)। ফিরতে ফিরতে সেই মাঝরাত। মাঝের এই ১২–১৪ ঘণ্টা সাইকেলে করে চষে বেড়ান গোটা শহর। এ গলি থেকে ও গলি, মানুষের বাড়ি বাড়ি খাবার বিলি করেন। ইংরেজিতে গালভরা নাম আছে কাজটার। কেউ বলেন, ‘রাইডার’, কেউ ডাকেন ‘ডেলিভারি বয়’ বলে। গালভরা নাম হলেও পকেটভরা টাকা আসা তো দূরে থাক, তিন বেলা খেয়েপরে চলাই দায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, উদয়াস্ত সাইকেলের প্যাডেল ঘুরিয়েও জীবনের চাকাটা যেন ঘোরে না উজ্জ্বলের। দিন শেষে মোটে ৪০০–৫০০ টাকা জোটে। তা দিয়ে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে সংসার চালানোই দায়। তারপরও উজ্জ্বলের ভাষায়, ‘এই সাইকেল আর মুঠোফোনটাই আমার রিজিক।’
সাইকেলে চড়ে কেউ জীবিকার তাগিদে বের হন। আবার কেউ বের হন মনের ক্ষুধা মেটাতে, রোমাঞ্চের খোঁজে। আজ এ জেলা তো কাল ও জেলা। মহামারির কারণে অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয় নিয়াজ মোর্শেদের ঘোরাঘুরির পায়ে শিকল পরে ছিল বলতে গেলে। বহুদিন ধরে একটা ট্যুরের জন্য মুখিয়ে ছিলেন। গেল ঈদের ছুটিতে সেই সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। সাইকেলটা নিয়ে একাই বেরিয়ে পড়লেন ক্রসকান্ট্রি (দেশের একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত) দিতে। নতুন কিছু দেখার, নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে মেশার আশায়।
মহামারির কারণে হরেদরে চাকরি চলে যাচ্ছে অনেকের। সেই মহামারি নতুন কাজ, নতুন চাকরিরও সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। ঘরবন্দী মানুষের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য থেকে শুরু করে খাবারদাবার পৌঁছে দিতে খোঁজ পড়ে ডেলিভারি ম্যানদের। নিজের একটি সাইকেল ছাড়া এই কাজ সম্ভব নয়। এ জন্য শুরুতে অন্যের সাইকেল ধার করে নিয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার সরবরাহের কাজ শুরু করেছিলেন হাসিবুল ইসলাম।
পরে অবশ্য নিজের টাকায় সেকেন্ড হ্যান্ড সাইকেল কিনেছেন। এইচএসসি পাসের পর মাস তিনেক আগে মাদারীপুর থেকে ঢাকায় এসেছিলেন। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার ইচ্ছা তাঁর। এর ফাঁকে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়ে ফুড ডেলিভারির কাজ করছেন।
আর উজ্জ্বল বোস মনে করেন, সাইকেলে ঘুরে ঘুরে খাবার সরবরাহের এই কাজ হাজার হাজার তরুণের জীবন বদলে দিয়েছে, বেকারত্ব ঘুচিয়েছে অনেকের। বছর তিনেক আগে তিনি নিজেও চাকরি করতেন। চাকরি হারিয়ে এই পেশায় মোটের ওপর দিন চলে যাচ্ছে তাঁর।
গত বছর করোনার প্রকোপ বাড়ার পর থেকে এ প্ল্যাটফর্মে কাজ করা তরুণের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানিয়েছে ফুডপ্যান্ডা। গত এক বছরে সক্রিয় রাইডের সংখ্যা প্রায় ৭০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়
Post a Comment