ভারতের উত্তর প্রদেশের গোরক্ষপুর জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে জেলার গোরক্ষনাথ মন্দিরের নিকটে বাস করা মুসলিম পরিবারগুলোকে তাদের বাড়ি ছেড়ে দিতে চাপ দেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। মন্দিরের নিরাপত্তার অজুহাতে এই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।
অপরদিকে সরকারি কর্মকর্তারা দাবি করছেন, পরিবারগুলো স্বেচ্ছায় নিজেদের বাড়ি খালি করতে সম্মতি দিয়েছেন।
সরকারি দাবির পরিপ্রেক্ষিতে একটি সম্মতিপত্র উপস্থাপন করা হচ্ছে। এর বক্তব্য হলো, মন্দিরের নিরাপত্তার স্বার্থে পরিবারগুলো স্বেচ্ছায় বাড়ি খালি করে যাবেন।
সম্মতিপত্রে নয়টি মুসলিম পরিবারের স্বাক্ষর রয়েছে। পরিবারগুলো বলছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা তাদের এই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে বলেন।
ইন্ডিয়া টুমোরোর এক প্রতিবেদনে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য ইনতিজার আহমেদের বরাত দিয়ে বলা হয়, তাদের বাড়ি খালি করার কোনো নোটিশ দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, 'হঠাৎ সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট আমাদেরকে বলেন এ সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর করতে। পরে আমাদেরকে বাড়িগুলো খালি করার নির্দেশ দেয়া হয়। আমাদেরকে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো ধরনের নিশ্চয়তা দেয়া হয়নি।'
ইন্ডিয়া টুমোরোর প্রতিবেদন অনুসারে, কিছু সরকারি কর্মকর্তা ভুক্তভোগীদের বাড়িতে যান, জমি মাপার কাজ করেন এবং চলে যান। এলাকাবাসীরা বলছেন, ২৮ মে তারিখে ওই সরকারি কর্মকর্তারা আবার আসেন এবং মুসলিম পরিবারগুলোকে বাড়ি খালি করতে বলেন।
এক দিন পরে তারা আবার আসেন এবং ওই মুসলিম পরিবারগুলোকে সম্মতিপত্রগুলোতে স্বাক্ষর করতে বলেন। পরিবারগুলো সম্মতিপত্রগুলোতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানান। কিন্তু, তারা এক মুসলিম পরিবারের প্রধানের কাছ থেকে জোর করে ওই সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর নেন।
বুধবার সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট, তহশিলদার ও অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা আবার ওই ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর কাছে যান এবং তাদেরকে ওই সম্মতিপত্রগুলোতে স্বাক্ষর করতে বলেন। তারা ক্ষতিপূরণের বিষয়ে কোনো কিছু বলেননি। পরে তারা ওই ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে তহশিল অফিসে যেতে বলেন এ বিষয়ে আরো আলোচনার জন্য।
পরিবারগুলো সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আনুষ্ঠানিক কোনো সরকারি নোটিশ না আসা পর্যন্ত কোনো প্রকার বৈঠকে অংশ না নেয়ার এবং কোনো নথি বা সম্মতিপত্রে স্বাক্ষর না করার।
সমাজবাদী দলের প্রবীণ নেতা জিয়া-উল-ইসলাম বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া নথিপত্রে পরিষ্কারভাবে দেখা গেছে যে ওই ব্যক্তিদের একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলা হচ্ছে। ওই কাগজে কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা ডিপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ ছিলো না। এতে কোনো ধরনের আইনি বৈধতা নেই।’
ভারতীয় কংগ্রেসের উত্তর প্রদেশ সংগঠনের সংখ্যালঘু শাখার সভাপতি শাহনেওয়াজ আলম প্রাদেশিক মূখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের তীব্র সমালোচনা করে বলেন, ‘যোগী আদিত্যনাথের জানা উচিত নবাব আসিফ উদ্দিন ছিলেন একজন মুসলিম, যিনি গোরক্ষনাথ মন্দির নির্মাণের জন্য জমি দিয়েছিলেন। তারপরেও বিজেপি নেতা ও মন্ত্রীরা জমি দখল করছেন আর এখন মূখ্যমন্ত্রীও এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। এটি শুধু অবৈধই নয়, একইসাথে ধর্মবিরোধী।'
সূত্র : মুসলিম মিরর,নয়া দিগন্ত
إرسال تعليق