দেশে করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ ও মৃত্যুর মিছিল ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস সংক্রমণে গত ২৪ ঘণ্টায় (বুধবার সকাল ৮টা থেকে আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত) ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে ভাইরাসটিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ২১ হাজার ৯০২ জনে। এছাড়া একই সময়ে নতুন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন আরও ১২ হাজার ৭৪৪ জন। এ নিয়ে দেশে মোট শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৩ লাখ ২২ হাজার ৬৫৪ জনে। নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৭ দশমিক ১২ শতাংশ। মোট পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একই সময়ে সরকারি ও বেসরকারি ৭০৭টি ল্যাবরেটরিতে ৪৬ হাজার ৫২২টি নমুনা সংগ্রহ ও ৪৬ হাজার ৯৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়ালো ৭৯ লাখ ৯৫ হাজার ৬৭৮টি। মহামারি শুরু হওয়ার পর এক দিনে করোনায় এটাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু। এর আগে দেশে একদিনে করোনায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর খবর এসেছিল গত ২৭ জুলাই, ২৫৮ জনের।

আরও বলা হয়, ২৪ ঘণ্টায় করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ১৫ হাজার ৭৮৬ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ১১ লাখ ৫৬ হাজার ৯৪৩ জন। মৃত ২৬৪ জনের মধ্যে পুরুষ ১৪০ ও নারী ১২৪ জন। এদের মধ্যে সরকারি হাসপাতালে ১৯০, বেসরকারি হাসপাতালে ৫৫ এবং বাড়িতে ১৫ জনের মৃত্যু হয়। মৃত ২৬৪ জনের মধ্যে শূন্য থেকে দশ বছরের একজন, দশোর্ধ্ব একজন, বিশোর্ধ্ব ৫ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ২৫ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৩১ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৫৯ জন, ষাটোর্ধ্ব ৭৪ জন, সত্তরোর্ধ্ব ৫০ জন, আশির্ধ্ব ১৫ জন এবং নব্বই বছরের বেশি বয়সী ৩ জন মারা যান। গত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে ঢাকা বিভাগে। বিভাগওয়ারি হিসাব অনুযায়ী, ঢাকায় ৮৭ জন, চট্টগ্রামে ৫৬ জন, রাজশাহীতে ১৯ জন, খুলনায় ৩৫ জন, বরিশালে ১৬ জন, সিলেটে ২৩ জন, রংপুরে ১৮ জন এবং ময়মনসিংহে ১০ জনের মৃত্যু হয়। আগের দিন ২৪১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল ১৩ হাজার ৮১৭ জন। পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ছিল ২৭ দশমিক ৯১ শতাংশ।

বাংলাদেশে প্রথম করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয় গত বছরের ৮ মার্চ। এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ কমবেশি হলেও দুই মাসের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক অবস্থায় পৌঁছেছে। করোনার ডেলটা ধরনের দাপটে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু কয়েক গুণ বেড়েছে। গত জুলাই মাসে দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৬ হাজার ১৮২ জনের। প্রায় দেড় বছর ধরে চলা এই মহামারিতে এর আগে কোনো মাসে এত মৃত্যু দেখেনি বাংলাদেশ। এর আগে বেশি মৃত্যু হয়েছিল গত এপ্রিলে ২ হাজার ৪০৪ জনের।

জানা যায়, সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে গত মাসের প্রথম দুই সপ্তাহ দেশে সর্বাত্মক বিধিনিষেধ পালন করা হয়। এ সময় সব ধরনের অফিসের পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচলও বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু ২১ জুলাই ঈদুল আজহা উপলক্ষে এই বিধিনিষেধ আট দিনের জন্য শিথিল করা হয়। ঈদের পর ২৩ জুলাই থেকে আবার দুই সপ্তাহের সর্বাত্মক বিধিনিষেধ চলছে। ৫ আগস্ট এই বিধিনিষেধ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে সরকার তা ৫ দিন বাড়িয়ে তা ১০ আগস্ট পর্যন্ত চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

Post a Comment

أحدث أقدم