বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা মামলার দুই বছর পার হয়ে গেলেও এখনো বিচার কার্যক্রম শেষ হয়নি। এখন এই মামলার বিচারে উভয়পক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে।

ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। আগামী ২০ অক্টোবর মামলায় পরবর্তী তারিখ রয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলছেন, ‘মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়ে এখন যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বেশ কিছুদিন আদালত বন্ধ ছিল। ফলে মামলার কার্যক্রম কিছুটা পিছিয়ে গেছে।’

‘এখন রাষ্ট্রপক্ষের আমরা যুক্তি তুলে ধরছি। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সুযোগ পাবেন। এরপর রায়ের দিন ঘোষণার বিষয় আসবে।’

আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলছেন, ‘আমার আদালতে আমাদের যুক্তি তুলে ধরেছি। রাষ্ট্রপক্ষের পর আমরা যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবো। সবমিলিয়ে মামলাটি শেষের দিকে রয়েছে।’

সেই রাতের যে সব ঘটনাপ্রবাহ গণমাধ্যমে এসেছে

কুষ্টিয়ার ছেলে আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের শেরেবাংলা হলের সিঁড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

তখন চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহরাব হোসেন বিবিসিকে জানিয়েছিলেন, পুলিশের ধারণা রাত ২টা থেকে আড়াইটার দিকে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। লাশ উদ্ধার করা হয়েছে ভোরে।

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সোহেল মাহমুদ সেই সময় বিবিসিকে বলেছিলেন, ভোঁতা অস্ত্রের আঘাতেই মৃত্যু হয়েছে আবরারের।

এজাহারে আবরার ফাহাদের বাবা ও তদন্তের পর পুলিশ বলেছিল, আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

মামলার কার্যক্রম যেভাবে এগিয়েছে

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আবরার ফাহাদের বাবা বরকত উল্লাহ পরদিন চকবাজার থানায় একটি মামলা করেন। সেখানে অভিযোগ করা হয়, শিবির সন্দেহে তাকে ডেকে নিয়ে পিটিয়ে মেরেছে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সেখানে বুয়েট ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়।

মামলার তদন্তের পর ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, আসামিরা র‍্যাগিংয়ের নামে বুয়েটে আতঙ্ক বা একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিল, তার ধারাবাহিকতাতেই একাধিক কারণে নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছে। এর তথ্য-প্রমাণ তারা তদন্তে পেয়েছেন।

তদন্তের পর ২০১৯ সালের ১৩ নভেম্বর ২৫ ছাত্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দেয় পুলিশ। ২০২০ সালের ২১ জানুয়ারি সেই অভিযোগপত্রটি আদালত আমলে নেন। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর ২৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে মোট তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, ৩০২ ধারায় নরহত্যা, ৩০২ এর ৩৪ ধারা অনুযায়ী হত্যার পূর্ব-পরিকল্পনা এবং ১০৯ ও১১৪ ধারায় হত্যায় অংশগ্রহণের অভিযোগ গঠন করা হয়। এসব অভিযোগে বলা হয়, তারা পরস্পর যোগসাজশে শিবির সন্দেহে আবরার ফাহাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে।

এই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার অভিযোগে কিছু ভুল সংশোধন করে অভিযোগ পুনর্গঠন করা হয়েছে।

তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আবদুল্লাহ ভুঁইয়া বিবিসিকে বলেছেন, গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর এ মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, ‘কিন্তু আদালতে চার্জ-ফর্মে ঘটনাস্থলের নাম ভুল লেখা হয়েছিল, এরকম আরো কিছু ভুল ছিল। যেমন গেস্টরুমের জায়গায় গেস্টহাউজ লেখা ছিল ওই ফর্মে, কিন্তু বুয়েটে কোনো গেস্টহাউজ নেই।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের নজরে আসার পর আমরা পুনরায় অভিযোগ গঠনের আবেদন করি। সে আবেদন প্রেক্ষিতে শুনানির পর আজ আদালত এই রায় দিয়েছে।’

বিচার চলাকালে মোট ৪৬ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।

মামলায় অভিযুক্ত ২২ আসামি কারাগারে রয়েছেন, তিনজন পলাতক।

আবরার হত্যাকাণ্ড যেভাবে আলোড়ন তৈরি করেছিল
আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভ হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সমাজের নানা শ্রেণী-পেশার মানুষও সোচ্চার হয়েছে।

শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে শুরু করে।

সে প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বা বুয়েট কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সব ধরনের রাজনৈতিক সংগঠন এবং ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।

আবরার হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারীরা একটি গায়েবানা জানাজারও আয়োজন করেন।

বরিশাল ও ময়মনসিংহ শহরের টাউন হলের সামনে মানববন্ধন করেছে ছাত্র ফেডারেশন।

ময়মনসিংহেও ছাত্ররা মানববন্ধন করেছে বলে জানা গেছে।

আবরারের বাড়ি কুষ্টিয়ার যে গ্রামে সেখানে বিক্ষোভ করেছে গ্রামবাসীরা।

সূত্র : বিবিসি


Post a Comment

Previous Post Next Post